Home ইসলামমিম্বর থেকে। জীবন সায়ান্হে নবীজীর বিশেষ ওসিয়ত

মিম্বর থেকে। জীবন সায়ান্হে নবীজীর বিশেষ ওসিয়ত

by MD JUNAYED SHEIKH
মিম্বর থেকে। জীবন সায়ান্হে নবীজীর বিশেষ ওসিয়ত

শায়খ আরীফ উদ্দীন মারূফ

খতীব , সার্কিট হাউজ জামে মসজিদ, কাকরাইল , ঢাকা ; রইস , জামিআ ইকরা বাংলাদেশ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারঁ জীবনের শেষ কয়েকটি দিন মারাত্মক অসুস্থ ছিলেন এমনকি নামাজের ইমামতি করাতে পারছিলেন না। এমন সঙ্গিন মুহুর্তে ও পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একনিষ্ঠ সাহাবিদেরকে ও তাঁর সকল উম্মতকে বিশেষ কিছু অসিয়ত করেছেন, বারবার বলেছেন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমরা খুব সতর্ক থাকবে।

১. আনসারিদের ব্যাপারে ওসিয়ত

সর্বপ্রথম নির্দেশনা ছিল, তোমরা আমার ইন্তেকালের পর আমার আনসারি সাহাবীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। তাদের মধ্যে যে ভালো তাকে সম্মান করবে আর কেউ ভুল করলে তাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তারা আমার একান্ত ঘনিষ্ঠজন,তারা আমার ভিতরের কাপড়ের মতো।

২. কবর পূজার নিন্দা

তোমরা কবর পূজা থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহ পাক ইহুদিদের ধ্বংস করুন,তারা তাদের নবীদের কবরকে সেজদার জায়গা বানিয়ে ফেলেছে।

নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, “খবরদার! আমার কবরকে তোমরা সেজদার জায়গা বানাবে না।”

আজ আফসোস সে সকল মুসলমানদের যারা নিজেদের নবীজীর উম্মত দাবী করে অথচ মাজারে গিয়ে সেজদা করে। আর পীর নামের কিছু ভন্ডরা মূর্খতার কারণে সেই সেজদা আগ্রহভরে গ্রহণ করে। মনে রাখবেন,শিরক ছাড়া আল্লাহ পাক সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু তওবা ছাড়া শিরকের গুনাহ আল্লাহ পাক কষ্মীনকালেও ক্ষমা করবেন না।

৩. আল্লাহর প্রতি সুধারণা

নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় ওসিয়ত করলেন যে,আল্লাহ পাক সম্পর্কে সুধারণা ছাড়া তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে। এক হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ পাক বলেন,”আমার সম্পর্কে আমার বান্দা যেমন ধারণা করবে আমি তেমনই।”

বিপদে পড়ে কেউ যেন হতাশ না হয়, হায়! হায়! আমার কি হবে?আমার ক্ষমা হবে না ইত্যাদি।

মনে রাখবেন, ঈমানের দুইটি অংশ

এক. আল্লাহর আযাবের প্রতি খওফ (ভীতসন্ত্রস্ততা)

দুই. আল্লাহর রহমতের রজা’ (আশাবাদ)

উলামায়ে কেরাম বলেন, উপরোক্ত অবস্থা দুই সময়ের; যৌবনের অবস্থা হবে ভীতসন্ত্রস্ততা আর বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিরাজ করবে আল্লাহর প্রতি রহমতের আশাবাদী অবস্থা।

৪. নামাজ নামাজ নামাজ

সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের ব্যাপারে উম্মতকে সাবধান হতে বলেন। কেননা বান্দার উপর আল্লাহ পাকের যত হক্ব বা অধিকার আছে তন্মধ্যে নামাজ সবার আগে। হযরত ওমর রা.বলেন,যার নামাজ ঠিক তার বাকি সব ঠিক। অথচ আজ বড্ড পরিতাপ এই উম্মতের উপর যারা নামাজের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদাসীন।

বড় এক শিল্পপতি, আমার মুসল্লি একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর! আমি খুব ব্যস্ত থাকি,অফিসের কাজের চাপ, মিটিং ইত্যাদি লেগে থাকে, নামাজের সময় পাই না, তাই বাসায় এসে রাতে একসাথে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা পড়ে নিই। চিন্তা করুন কত বড় মূর্খতা! জাতি হিসেবে আমরা মুসলমান কতটা গাফেল, উদাসীন। অথচ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”যে ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগ করে সে কাফের হয়ে গেল।”

নামাজ নিয়ে পরিতাপের শেষ নেই,যারা নামাজ পড়ে তারাও তাড়াহুড়ো করে। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে বড় চমৎকার বলেছেন যে,মসজিদে আসে আর চারটি ঠোকর মারে মুরগির মতো” এ সব লোকের সম্বন্ধে আল্লাহ পাক সূরা মাউনে বলেছেন, “নামাজে অলসতাকারীরা ধ্বংস হোক”

৫. অধীনস্থদের ব্যাপারে ওসিয়ত

এই কথাটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের সাথেই উচ্চারণ করেছেন যে, তোমরা তোমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। আমার পরিবার আমার অধীনস্থ, আমার অফিসের লোকজন আমার অধীনস্থ, কর্মচারী অধীনস্থ সুতরাং তাদের হক্বের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে।

আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কর্মচারীদের খুব গালিগালাজ করে,আমি তাকে বুঝাইলাম এভাবে ওদের সাথে বাজে আচরণ করবেন না। সে আমাকে পাল্টা বলল,তোমার মতো বইয়ের ভাষায় কথা বললে তারা কথা শুনবে না, এরা বড্ড পাজি। আসলে আমরা আমাদের সিস্টেম এভাবে বানিয়ে ফেলছি। যদি কোমলতা, মাধুর্যতাকে নিজেদের অলংকার বানাতাম তাহলে অধীনস্থরা কথা শুনতে বাধ্য হত।



শ্রুতিলিখন ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মাদ আইয়ুব

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment