হাদিস শরিফে এসেছে, মুমিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম। ছবি: সংগৃহীত
আজ শাবান মাসের ১ তারিখ। শাবানের পরবর্তী মাসই বহুল কাঙ্ক্ষিত রমজান। আজ থেকেই নিন রমজানের প্রস্তুতি। প্রতি বছর রহমত, বরকত, মাগফিরাতের অপার পসরা সাজিয়ে রমজান মাস আসে আবার চলে যায়। রমজান মাস বিদায় নেওয়ার পরে আমরা আফসোস করতে থাকি, রমজান চলে গেল, রমজান পেয়েও আমি কিছুই হাসিল করতে পারলাম না!
রমজানে মাগফিরাতের এতো এতো স্পেশাল থাকা সত্ত্বেও আমি নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারলাম না! আল্লাহ পাকের দরবারে নিজের মর্যাদা বুলন্দ করতে পারলাম না! সিয়াম, কিয়াম, সাহরী, তারাবির বরকত পেয়েও সারা বছরের আত্মিক শক্তি অর্জিত হয়নি! এক মাস সিয়াম থেকেও তাকওয়া, ধৈর্য, সংযম, সহনশীলতা, সহমর্মিতার মতো উত্তম আখলাকে নিজেকে সুশোভিত করতে পারিনি!
এমনকি রমজানের রোজাগুলোও অনেকের পক্ষে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেকের পক্ষে পুরো রমজানে একবারও কোরআন খতম সম্পন্ন করার সুযোগ হয় না। সাহরির জন্য জাগতে হয় এরপরেও তাহাজ্জুদ নসিব হয় না! রমজান মাসে পারিবারিক খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও দান সদাকা করতে পারি না! মাসের শেষের দিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো কেনাকাটার পেছনে নষ্ট হয়ে যায়! বিগত রমজান গুলোর মত আগত রমজান মাসটিও যেন হেলায় ফেলায় কেটে না যায়, সেজন্য প্রয়োজন অগ্রিম প্রস্তুতি।
কিভাবে নিব রমজানের প্রস্তুতি
বিশুদ্ধ নিয়ত
হাদিস শরিফে এসেছে, মুমিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম। (মাকাসিদুল হাসানাহ: ১১৫৪)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ব্যক্তি কোনো নেক আমলের নিয়ত করলেই তার জন্য একটি করে সওয়াব লেখা হয়। আর কর্মটি সম্পাদন করলে ১০ গুণ সওয়াব দান করা হয়। (বুখারি: ৬৪৯১) তাই, অত্যাসন্ন রমজান মাসে যাবতীয় আমল যথাযথ প্রতিপালনের নিয়ত পোষণ করলে, আমল করার সুযোগ না পেলেও শুধু নিয়তের কারণে ব্যক্তিকে এক গুণ সওয়াব দান করা হবে।
দোয়া করা
হাদিস শরিফে এসেছে, দোয়া ঈমানদারের হাতিয়ার। (মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৮৩৬)। অন্য হাদিসে রজব ও শাবান মাসে পঠিতব্য একটি বিশেষ দোয়া স্থান পেয়েছে, হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত বাড়িয়ে দিন। তাই, রমজানের আমল গুলো সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে তাওফিক প্রার্থনা করা একান্ত জরুরি।
যেমনটি হাদিস শরিফে এসেছে, নবীজি ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়ে নিম্নোক্ত দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন, اللَّهمَّ أعنِّي على ذِكْرِكَ، وشُكْرِكَ، وحُسنِ عبادتِكَ. হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার জিকির করার, শুকরিয়া আদায় করার এবং উত্তম ইবাদতে সাহায্য করুন। (আবু দাউদ: ১৫২২)।
প্রতিবন্ধকতা গুলো অপসারণ করুন
(ক) সিয়াম প্রতিপালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন রোগের চিকিৎসায় গ্রহণ করুন। (খ) যে পেশা সিয়াম পালনে প্রতিবন্ধক, তা পরিবর্তন করুন অথবা কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনুন। (গ) দীর্ঘ সময় নিয়ে সালাতুত তারাবি বা আদায়ের জন্য রমজানের পূর্বেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামাজ বিশেষত তাহাজ্জুদের অনুশীলন করুন। (ঘ) রমজান, সিয়াম, কিয়াম সম্পর্কিত মাসায়িল রমজান আগমনের পূর্বেই জেনে নিন। (ঙ) রমজানে আমলের জন্য বাস্তবসম্মত রুটিন এখনই তৈরি করুন এবং তা অনুশীলন করুন।
(চ) আমলগুলোর ফজিলত ও হাকিকত সম্পর্কিত গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করুন। (ছ) পারিবারিক কেনাকাটা, নির্মাণ, সংস্কার জাতীয় কাজগুলো রমজানের পূর্বেই সেরে নিন। (জ) এখান থেকেই কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত শুরু করে দিন, যাতে অনভ্যাস জনিত কারণে রমজানে আপনার তেলাওয়াত মিস হয়ে না যায়। (ঝ) যারা কুরআনুল কারীম পড়তে সক্ষম নন, তাঁরা কুরআন শিক্ষার আসর শাবান মাস থেকেই শুরু করুন। (ঞ) শাবান মাস জুড়ে অধিক পরিমাণে নফল সিয়াম পালন করুন।
(ট) রমজানের সাদাকাহ এবং রোজাদারদের ইফতার করানোর উদ্দেশ্যে এখন থেকেই পারিবারিক ব্যয় সীমিত করুন এবং সঞ্চয় করুন। (ঠ) যাদের জামায়াত ছুটে যায়, তাঁরা এখন থেকেই জামায়াতে নামাজ আদায়ের অভ্যাস করুন। (ড) যাঁদের ফরজ নামাজ ছুটে যায়, তাঁরা এখন থেকে ফরজ নামাজে নিজেদের অভ্যস্ত করে নিন। (ঢ) যাবতীয় গুনাহ থেকে বিরত থাকার উত্তম প্রশিক্ষণের মাস রমাদান। যাদের ধূমপান, মাদক সেবন, পান-সাদাপাতা, গুল সেবনের অভ্যাস রয়েছে, তারা রমজানকে কাজে লাগিয়ে এ অভ্যাসগুলো থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিন। সেজন্য এখন থেকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রিত করুন। (ণ) অধিক পরিমাণে তাসবিহ, তাহলিল, জিকির, ইস্তিগফার ও দুরুদ শরীফ এর অভ্যাস করে নিন।
(ত) হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা, পরচর্চার মতো মন্দ স্বভাবগুলো পরিত্যাগের শপথ করুন এবং এখন থেকে অনুশীলন করুন। (থ) পরিবারের সদস্যদের বয়স ও পেশা অনুযায়ী একইভাবে রুটিন করে দিন, আমলে অভ্যস্ত করে তুলুন, ঘরে ঘরে রমজান কেন্দ্রিক তালিমের আয়োজন করুন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে রমজান পর্যন্ত শারীরিক মানসিক সুস্থতা নসিব করুন, রমজানের সিয়াম, কিয়াম সাহরি, ইফতারসহ যাবতীয় ইবাদত যথাযথভাবে প্রতিপালনের তাওফিক দান করুন, আমিন।