Home ইসলামতাবলিগ জামাতের ছয় উসুল

তাবলিগ জামাতের ছয় উসুল

by MD JUNAYED SHEIKH

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগতীরে হাজারো মুসল্লির ঢল

তাবলিগ জামাতের ৬ নম্বর কিংবা ছয় উসুলকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে দেখা হয়। তাবলিগের ভাষায় বলা হয়ে থাকে যে  ‘দ্বীনের ওপর চলাই হচ্ছে মানবজীবনের আসল উদ্দেশ্য। সাহাবি আজমাইনগণ হুজুর পাক (সা.)–এর সঙ্গে থাকার কারণে অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার মধ্যে কয়েকটি গুণের ওপর মেহনত করে আমল করতে পারলে দ্বীনের ওপর চলা সহজ।’ এগুলো হলো—১. কালেমা, ২. নামাজ, ৩. এলেম ও জিকির, ৪. ইকরামুল মুসলিমিন, ৫. তাহসিহে নিয়ত ও ৬. দাওয়াত ও তাবলিগ।
তাবলিগ জামাতের ছয় উসুল বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়; বরং প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাই একটিকে বাদ দিয়ে অন্যগুলো বোঝা যাবে না ও সব কটিকেই গুরুত্ব দিয়ে চর্চা করার কথা বলা হয়েছে।

যদি আমরা প্রথম দুটি উসুলের কথা চিন্তা করি, তাহলে দেখব গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কালেমা ও নামাজ কায়েম করার প্রতি। পাশাপাশি জিকির ও জ্ঞান অর্জন করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের সাথিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, এর প্রতিটি বিষয়ে তাঁদের জানার আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করা হয়। ধার্মিক জীবন গঠনের জন্য ইসলাম ধর্ম–সম্পর্কিত জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

এর সঙ্গে অন্য মুসলমানদের ভালোবাসা ও তাঁদের সম্মান রক্ষা, সাহায্য-সহায়তা করার কথাও বলা হয়েছে পরবর্তী উসুলে। কেননা, একজন মুসলমানের দায়িত্ব অন্য একজন মুসলমানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা কিংবা তাঁকে সাহায্য করা। পঞ্চম বিষয়টিতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর উপাসনার সময় যেন তাঁরা প্রতিটি নিয়ত ঠিক রাখে ও তাঁদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ মেনে চলে। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার গুণাবলি অর্জন করা ও সেসব গুণে নিজের জীবনকে গুণান্বিত করা। অবশেষে মাওলানা ইলিয়াস (র.) দাওয়াতের কাজ পরিচালনা করার ওপর যে গুরুত্বারোপ করেন, সেটি আমাদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করার দাবি রাখে।

তাবলিগের সাথিদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এই ছয় উসুল কারও মাথা থেকে আসেনি; বরং এগুলো পবিত্র কোরআন-হাদিস অনুসারেই গঠিত হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার এক বয়ানে একজন মুরব্বি বলছিলেন যে, কোরআন ও হাদিসের আলোকেই এই ছয় উসুলকে বুঝতে ও আমল করতে হবে। তবে মাওলানা ইলিয়াস (র.) যে কাঠামো নিয়ে এসেছেন, এর মূলে কাজ করেছে মুসলমানদের মন-মানসে ধার্মিকতা বৃদ্ধি করার একটি প্রক্রিয়া। তাঁদের দাওয়াতের সব প্রক্রিয়াতেই প্রথমে এই ছয় উসুলকে আত্মস্থ করার কথা বলা হয়, বিশেষ করে নতুন সাথি কিংবা সদস্যদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁরা যেন তাড়াতাড়ি এটি আত্মস্থ করে ফেলেন। এটা নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে পারলেই ধারণা করা হয়, তাঁরা অন্য একজনের কাছে তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে যেতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেরাই ইসলামের অন্য বিষয়গুলোর ওপর নিজের চর্চাটিও বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাই তাবলিগ জামাতের সাথিদের বলা হয় যে এই গুণাবলি অর্জন করতে পারলে প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে দ্বীনের ওপর চলা সহজ হবে।

যেকোনো নতুন সদস্যের জন্য এই ছয় উসুল দ্রুত আত্মস্থ করা অনেকটাই অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। এটি যত দ্রুত আত্মস্থ করা সম্ভব হবে, তত দ্রুত একজন নতুন সাথি জামাতের কাজের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাবলিগ জামাতের দাওয়াতের কাজ করতে পারবেন।

আমার মনে পড়ে, মাঠপর্যায়ের গবেষণা কাজের সময় আমি এত দ্রুত এই ছয় উসুল আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমি নতুনদের মধ্যে সবার আগে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলাম, এমনকি আমাকেও একসময় মসজিদে বয়ান করতে হতো। এর মাধ্যমে নতুনদের শেখার মাত্রাটি তাঁরা বুঝতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে মুরব্বিরা নতুনদের বয়ান কিংবা অন্যান্য দাওয়াতের কাজের ব্যাপারে নানা রকম পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন, যাতে তাঁরা আরও ভালোভাবে এই কাজগুলো করতে পারেন। কেউ ভুলভ্রান্তি করে থাকলেও তাঁকে তাঁর ভুল ধরিয়ে দিতেন অন্যরা। এর মাধ্যমে চিল্লার সময় নতুনদের তাবলিগের দাওয়াতের নানা রকম খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা হয়। চিল্লার একটা সময়জুড়েই এই ছয় উসুলের ওপর ভিত্তি করে নানা রকম আলোচনা করা হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তাবলিগের ছয় উসুলের গুরুত্ব কতটা তাঁদের কাছে।

সূত্র: তাবলিগ জামাত: বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিসরে, বুলবুল সিদ্দিকী, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৯



শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment