Home দেশতিতুমীরের শিক্ষার্থীদের অবস্থান, রেল ও যান চলাচল বন্ধ

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের অবস্থান, রেল ও যান চলাচল বন্ধ

by MD JUNAYED SHEIKH

মহাখালী রেলগেট অবরোধ করে রেললাইনের উপর অবস্থান নিয়েছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ দাবি করা শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে তিনটার পর তারা ওইস্থানে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ফলে ওই রুটের রেল ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এর আগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর মহাখালীর আমতলীতে কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নেয় ওই শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরের দিকে উপস্থিতি বাড়লে তারা মহাখালী রেলগেটে আসেন।

তিতুমীর কলেজকে বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার বলেছেন, দাবির মুখে সরকার আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবে না।

titumir01

এরপর তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যানের দাবি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করে ‘তিতুমীর ঐক্যের’ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘অনশন ও  বারাসাত ব্যরিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চলবে।’

সে সময় নতুন করে তিন দফা ঘোষণা করেন তারা। এগুলো হলো-

  • তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
  • শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
  • তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির  দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে গত বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে অনশনে বসেন কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থী। এরপর তাদের সাথে আরো কয়েকজন যোগ দেন।

গত শুক্র ও শনিবার এর মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসেছেন।

রোববার অসুস্থ হয়ে পড়েন আরো তিনজন। তখন রাসেল নামের এক চিকিৎসক বলেন, দ্রুত ওই শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে পাঠানো দরকার।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

titumir

গত শনিবার রাতে দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, জনভোগান্তি করতে চাই না, অল্প সময়ের জন্য গুলশান ও মহাখালী অবরোধ করে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা।

শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, জনদুর্ভোগ তৈরি না করা ছাড়া রাষ্ট্র কথা বলতে চায় না, সরকারকে এ ধারা থেকে বের হতে হবে।

গত শুক্রবার দিনভর মহাখালীর আমতলী ও ওয়ারলেস গেটে অবস্থান শেষে রাতে গুলশান-১ আটকে সড়কে অবস্থান নেয় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা কলেজের সামনে ফিরে এসে দ্রুত তাদের সাত দফা বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দেন। এসময় তারা জানান শনিবার বিকেল চারটার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেল ও সড়কপথ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারপরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন।

দীর্ঘ সময় পর এক পর্যায়ে যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক– সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছো। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি।’

গত কয়েকমাস ধরেই তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মাঝে কয়েক দফায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। এবার তারা বলছেন, দাবি আদায় না হলে কেউ আর বাড়ি ফিরে যাবেন না। তবে, সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, ‘অযৌক্তিক’ কোনো দাবি মানা হবে না।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment