Home শিল্প সাহিত্যস্মৃতিগদ্য । মাওলানা আল আমিন শাহ’র শাহাদাতঃ একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের প্রয়ানে কিছু স্মৃতিচারণ

স্মৃতিগদ্য । মাওলানা আল আমিন শাহ’র শাহাদাতঃ একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের প্রয়ানে কিছু স্মৃতিচারণ

by MD JUNAYED SHEIKH
স্মৃতিগদ্য । মাওলানা আল আমিন শাহ'র শাহাদাতঃ প্রতিশ্রুতিশীল

গতকাল রাত সাড়ে এগোরাটায় সর্বশেষ কথা হয়েছিল আমার প্রিয় ভাই আল আমীনের সঙ্গে— সৌদি জনগণের ফিলিস্তিন মনোভাব নিয়ে একটি অনুসন্ধানী লেখা চেয়েছিলাম। খানিকটা লিখেছিল বটে।

মেসেঞ্জারে আমাদের কথোপকথন পড়ুন।

আমি লিখেছিলাম— ফিলিস্তিন সম্পর্কে সাধারণ সৌদি জনগণের মনোভাব জানতে চাই।সৌদিতে তালেবানের মত হকের পতাকাবাহী কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠী নেই ?

আল আমীন বলল, আমি কি শুধু (অল্প কথায়) উত্তর দিবো নাকি এটা নিয়ে ( mjfnews.com ) লেখা দিতে বলছো ?

বললাম, উত্তর দিতে পারো কিংবা (বিস্তারিত) লিখতে পারো। তুমি যদি বিস্তারিত লেখ; তাহলে সবাই সৌদিদের মনোভাব জানতে পারবে। সবার মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ কাজ করছে।

এরপর আল আমীন লিখেছে, ‘গতকাল আমার গাড়িতে একটা ফিলিস্তিনি পরিবার উঠেছিল। আমি ছবি বা ভিডিও করতে চাইছিলাম; কিন্তু পরে মনে হলো- হয়ত তারা এটাতে কষ্ট পেতে পারে, তাই ছবি বা ভিডিও করি নাই। তবে অনেক কথাই হলো তাদের সাথে।
প্রায় ৫০ কিলো রাস্তা আমি তাদেরকে ড্রাইভ করে নামায় দিয়ে আসছি। ‘

—এটা নিয়ে বিস্তারিত লেখ
—আচ্ছা
—আগামীকাল পাবলিশ করে দিব।
—আচ্ছা তাইলে আজকে রাতের মধ্যেই দিবো ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ বললাম, তোমার লেখার হাত ভাল বিধায় তোমার নিকট প্রত্যাশা বেশি।’

অধমের প্রত্যাশার কথা জানতে পেরে আমার প্রিয় ভাই এই ম্যাসেজের উপর লাভ রিয়েক্ট দিল।

দুই আরব দেশ ও তাদের জনগণের মধ্যকার রহস্যময় সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারব সে দেশের একজন প্রবাসীর বস্তুনিষ্ঠ কলমে। ক্ষুদ্র সম্পাদক কিংবা একজন পাঠক হিসেবে এ আমার প্রাপ্তি। আমি খুশি মনে ঘুমুতে গেলাম।

সেহরির সময় ফেসবুক ওপেন করলাম, আল আমীনের লেখাটি কমপ্লিট কি-না দেখার জন্য। না আসেনি। মনে মনে দোয়া করলাম। কয়েকদিন পূর্বেও আল-আমীন আমাদের ওয়েবসাইটে লিখেছিল— ‘পাহাড়ের পাদদেশে আফ্রিকান বন্ধুর সঙ্গে আলাপ’। লেখাটি দ্রুত পাঠিয়েছিল— এক রাতের মধ্যে। অন্যান্য নবীন লেখকদের মত গড়িমসি করেনি।

করিতকর্মা ছিল খুব আর ওয়াদা রক্ষায় তৎপর। ওর ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দে নিরন্তর জোর ছিল— সবসময়।

এবারের লেখাটির জন্যও আমি আশায় বুক বেঁধেছি।

সেহরি শেষে ফজর পড়ে আবারও মেসেঞ্জার চেক দিলাম। না — আসে নি। আল আমীনের একটি বৈশিষ্ট — খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ঢলে ধরে। ওর পূর্বের লেখায় এর ছাপ পেয়েছি। ভাবলাম — এ জন্য হয়তো দেরি হচ্ছে। বিষয়বস্ত হিসেবে সময়েরও দরকার। দ্বিতীয়বার নক না দিয়ে সকালের প্রত্যাশায় থাকলাম।

ফেসবুক অন করলে নিউজফিড ভেসে ওঠে। সকাল দশটায় সর্বপ্রথম যে নিউজ দেখলাম, অপ্রত্যাশিত। ফেসবুক আমার ভাই, আমার বন্ধু আল আমিনের মৃত্যুসংবাদ দেখাচ্ছে। সাদা কাফনে মোড়া প্রিয় আল আমীনের নিথর দেহের একটি ছবি , ডান চোখ ব্যান্ডেজে মোড়া। গুলিবিদ্ধ। বিশ্বাস করতে পারি নি। থ হয়ে গেলাম।

স্ক্রল করে আরেকটু এগোতেই ওর আরেক সহপাঠীর পোস্ট। পূর্বের সংবাদের পুনরাবৃত্তি। ইন্না-লিল্লাহ পড়লাম।

আলআমীন চার বছর যাবত সুনামের সাথে ইমামতির দায়িত্বে ছিল— সৌদির জিজান প্রদেশে। অবসরকালীন সময়ে ড্রাইভিং করতো। সেখানকার এক পাহাড়ের পাশে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। পরোপকারী ছিল । শাহাদাত পূর্ব মুহূর্তে তার প্রমাণ রেখে গিয়েছে। প্রতিবেশী এক ভদ্রলোককে ডাকাত আক্রমন করেছিল। আল আমীন তাকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিল, তখন ফায়ার করে।

প্রিয় আলআমীন জামিআ ইকরায় আমার এক বছরের জুনিয়র ছিল। বড় হুজুর আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর নিকট বুখারির শেষ সবক নিয়েছিল। উস্তাদগণের সঙ্গে মুহাব্বতের সম্পর্ক ছিল আজীবন। ফারাগাতের পরপরই সৌদি পারি জমিয়েছিল। ইমামতির পাশাপাশি ব্যবসা করত। পরিবারে তিন ভাই— ও ছিল সবার বড় ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

আল আমীনের একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে— আট মাস বয়স। সে কথা ভাবতেই বড্ড খারাপ লাগছে। আল্লাহ পাক পুরো পরিবারকে সবরে জামিল ইখতিয়ার করার তাওফিক দান করুন।

আল আমীন গত পরশুদিন ফেসবুক পোস্টে লিখেছিল — ‘জীবন যেন এক অমীমাংসিত প্রশ্নের মতো। কোথাও থেমে নেই, কোথাও শান্তি নেই। যেখানে শান্তি মেলে সেখানেই কেবল বর্ষন হয় , তবুও চেষ্টা করেছিলাম থেকে যাওয়ার— তবে শেষে ঠাই হয়নি এই অবলার। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক অন্ধকারে ঠেলে দেয়। নিঃসঙ্গতার এই আকাশে একফোঁটা আলোর সন্ধান করি। একমাত্র স্রষ্টার কাছেই শেষ আশ্রয়—হয়তো কোনো অজানা প্রার্থনায় একটু শান্তি আছে, একটু স্বস্তি আছে। হৃদয়ের দেয়ালে লেখা ক্ষতের গল্পগুলো ধীরে ধীরে মুছে যাবে সময়ের স্রোতে।’

মরহুম আল আমীনের পরিবার যখন আস্তে ধীরে শোক কাঁটিয়ে উঠবে — ফিলিস্তিন বিষয়ক লেখাটি সম্পর্কে খোঁজ নেব।

ময়দানে মাহশারে খোদা তায়ালা অধমকে সুপারিশের যদি কোন মওকা দেন, আমার ভাইয়ের সর্বশেষ লেখাটি দেখাব— যা তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে মাজলুম ফিলিস্তিনিদের জন্য লিখেছিলেন। আশা করি , রহমানুর রাহিম আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

হে আল্লাহ, আমার ভাইকে তোমার রহমতের কোলে জায়গা দিও।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment