Home দেশজাদুর শহরে এমন গল্প জানেই বা কতজন?

জাদুর শহরে এমন গল্প জানেই বা কতজন?

by MD JUNAYED SHEIKH

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিনও পরিবার-পরিজন ছেড়ে ভোর শুরু হয় সড়কেই তাদের। ছবি: সময় সংবাদ

সাড়ে চার কোটি মানুষের শহরে একেক জনের, একেক রকম ঈদ উদযাপন হচ্ছে। রাজধানীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কথাই ধরা যাক না কেন। ঈদের দিনও পরিবার-পরিজন ছেড়ে ভোর শুরু হয় সড়কেই তাদের। ঈদের নামাজ কিংবা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন কোনও কিছুই নেই তাদের জীবনে। তবুও রাতভর কাজ শেষে প্রশান্তির হাসি মুখ আছে তাদের। নগরবাসী যেন সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেটাই তাদের একমাত্র চাওয়া। জাদুর শহরে এমন গল্প জানেই বা কতজন?

বুকের ব্যথাটা বেড়েছে ক’দিন যাবত। তবুও কাজ ছেড়ে থাকার উপায় নেই। ছোট ছেলেটার কঠিন অসুখ। সেই অসুখ সারাতে প্রয়োজন কাড়ি কাড়ি টাকা। তাই ঈদের দিন ভোর হওয়ার অনেক আগেই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ব্যস্ত সত্তোর্ধ্ব ফাতেমা বেগম নামে ওই নারী।

ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে এক বছর চার মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছে। কোনো রকম সাড়াশব্দ নেই। এজন্য এ কাজ আমি করছি। আরেকজন বলেন, জনগেণের সেবা করাই আমাদের কাজ তবে অনেক কষ্ট হয়। দুই চোখে ঘুম নাই, শুধু ঈদের দিন নয়, সারা বছরই এমন চলে আমাদের।

রাজধানীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অনেকেই বার্ধ্যক্যের ভারে নুয়ে পড়েছে। তবে পিছু ছাড়েনি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ।

কাজ শুরু হয়েছে চাঁদ রাতে। সময় গড়িয়েছে। ভোর হতেই জায়নামাজ হাতে ঈদের জামাতে যাওয়ার জন্য যখন নগরীর সবাই প্রস্তুতি শুরু করেছে, ঠিক একই সময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর গল্পটা ছিল ভিন্ন। নিশ্চয়তা নেই ঈদের নামাজের, কাজ শেষ হতে যে এখনও অনেক দেরি বলেও জানান তারা।

এক পুরুষকর্মী বলেন নামাজ ভাগ্যে জোটে না। দেশবাসীর জন্য আমাদের এ আননন্দ বিসর্জন দেয়া। ঈদের জামাতের নামাজ পেতেও পারি আবার নাও পেতেও পারি। কিন্তু কাজ তো করতেই হবে আমাদের।  

কষ্ট আছে, আছে পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঈদ উদযাপনের আক্ষেপ আমাদের মনেও। তবুও এ মানুষগুলোর চোখে মুখে আছে এক প্রশান্তির হাসি। নিজের খুশি বিসর্জন দিয়ে হলেও, তারা চান নগরবাসীর আনন্দের ঈদ উদযাপন।

অবশেষে ফুটেছে ভোরের আলো। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কেউ এখনও ঘর্মাক্ত শরীরে কাজ শেষের অপেক্ষায়, কেউ আবার প্রশান্তি নিয়ে ফিরছেন নিজ গন্তব্যে। জাদুর শহরে এমন গল্প জানেই বা কতজন?

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment