বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় ফজরের নামায শেষে হাঁটাহাঁটি করতে হলের বাহিরে সচরাচর আমি যেতাম না। হলের ব্লকগুলোর মাঝখানে যে বাগান আর ঘন সবুজে আচ্ছাদিত মাঠ, সেখানকার শিশিরধোয়া দূর্বাঘাসে খালি পায়ে হাঁটা ছিল আমার অনিয়মিত অভ্যেস।
ফজরের ঠিক পরেই—এক শারদপ্রাতে—পাশের রুমের জুনিয়র ফোকলোর বিভাগের সুমনের সাথে হল থেকে বের হলাম প্যারিস রোড চক্কর দিয়েই হলে চলে আসবো বলে। দুজন মিলে গালগল্পের সমান্তরালে মর্নিং ওয়াক (প্রাতর্ভ্রমণ) করছি। টুকিটাকি চত্বর, রবীন্দ্র ভবন, সিরাজী ভবন, ইবলিশ চত্বর পার হয়ে যেই-না প্যারিস রোডে পা রাখলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আনুমানিক ২০-২৫টি মোটরসাইকেল সাঁ সাঁ করে ঠিক আমাদের দুজনের সামনে এসে থেমে গেল!
মোটরসাইকেল আরোহীদের সবার হাতে হাতেই রামদা, চাইনিজ, চাপাতিসহ আরও অচেনা অস্ত্র দেখছি। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছুটা বিস্মিত হলেও বিচলিত হইনি।
আমার পরনে তখনও ছিল আটপৌরে পাঞ্জাবি-টুপি। এটাই ওদের কাছে সন্দেহের তীব্র তীর মনে হয়েছে বোঝা গেল। আমার ঠিক তখনই মনে পড়লো কিছুদিন হলো ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নতুন কমিটি এসেছে এবং নতুন কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব পদবঞ্চিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দের রোষানলে পড়েছে। পদবঞ্চিত আর পদপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্যাম্পাসের আধিপত্য ধরে রাখার মরিয়া হয়ে খেলা চলছিল।
মোটরসাইকেলে শোডাউনরতদেরকে দেখে মনে হলো নতুন কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাঙ্গপাঙ্গ ওরা। তাদের মধ্যে দুজন আমার শরীরের সাথে প্রায় মিশে গিয়েই জেরা শুরু করলো—কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন? কোন ইয়ার? এতো সকালে বের হওয়ার কারণ কী?
আমি নির্বিকার-নির্লিপ্ত মুখে ওদের কথার উত্তর দিয়ে ভাবলেশহীনভাবে ছোট ভাইটাকে নিয়ে হলের দিকে চলে আসি।
ক্যাম্পাসে এমন নৈরাজ্য আর ত্রাসের ভীতিকর পরিবেশ কায়েম করে যে ছাত্ররাজনীতি, সেই ছাত্ররাজনীতি থেকে মুক্ত থাকুক বিশ্ববিদ্যালয়—এটাই আমার চাওয়া।
আগস্ট ২০২৪