Home মুক্ত গদ্যস্মৃতিগদ্য। কুরবানি ঈদের স্মৃতি

স্মৃতিগদ্য। কুরবানি ঈদের স্মৃতি

by MD JUNAYED SHEIKH
স্মৃতিগদ্য। কুরবানি ঈদের স্মৃতি

ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ও খুশির দিন। ঈদ যেন মুমিন হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ তোলে। ধনী,গরীব, সাদা,কালো সব শ্রেণীর মানুষ এই দিনে নিজেদের শত কষ্ট , বিভেদ ভুলে ঈদের আনন্দ উদযাপন করে।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। মাদরাসার উস্তাদ ও ছাত্রদের জন্য এই ঈদুল আযহা এক অন্যরকম অনুভূতির নাম। সেই অনুভূতি নিয়েই আজকের এই লিখনী।

সাধারণত অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসায় কোরবানির চামড়া কালেকশনের জন্য উস্তাদ-ছাত্রদের এই ঈদে কোন ছুটি হয় না। ফলে তারা এই আনন্দের দিনে ও পিতা-মাতা,পরিবার-স্বজন , বন্ধু-বান্ধবের থেকে দূরে থেকে মাদরাসায় এই খেদমত আঞ্জাম দেন। শত কষ্ট হলেও লিল্লাহিয়াতের জন্য সব হাসি মুখে মেনে নেন।

সেরকম একটি কোরবানি ঈদের কথা মনে পড়ছে। কোরবানির এক সপ্তাহ পূর্বেই আমাদের মাসিক পরিক্ষা শেষ হয়ে যেত। পরিক্ষা শেষ করেই সেদিন যোহর বাদ কোরবানির চামড়া কালেকশনের জন্য উস্তাদ-ছাত্রদের নিয়ে গ্রুপ ভাগ হয়ে যেত।

সবাই তার প্রিয় উস্তাদের গ্রুপে যাওয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে থাকতো। যদি কেউ একটু রাগি উস্তাদের গ্রুপে পরতো তাহলে মুহুর্তেই তার চাঁদ মাখা মুখটা ফেকাসে হয়ে যেত। এরপর শুরু হতো যার যার এলাকায় গিয়ে যারা কোরবানি দিবেন, তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও চিঠি বিতরন। এক একজনের সাথে কয়েকবার করে সাক্ষাৎ করতে হতো যাতে করে কোন ভাবেই গরুর চামড়াটা হাতছাড়া না হয়।

মাদ্রাসা থেকে শুধুমাত্র সামান্য যাতায়াত ভাড়া দিত। কিছুদূর পায়ে হেঁটে কিছু সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে সবাই মিলে সামান্য নাস্তা করতাম যা সে সময় ফাইভ স্টার হোটেলের খাবারের মতো মনে হতো। অধিকাংশ সময় খালিশপুরের নাম করা ১ টাকার পুরি কিনে খেতাম যা আজও এক টাকা করেই রয়ে গেছে।

কোরবানির আগের দিন একটা শেষ মোলাকাত করে নিশ্চিত হয়ে যেতাম যে, কারা কারা আমাদের কোরবানি পশুর চামড়া দিবে। এক সময় আমার এই চামড়া কিনে তারপর বিক্রি করতাম।

আমি নিজেই ১২০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে পরবর্তীতে সেটা ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন এসব গল্প মনে হয়। কেনা তো দূরের কথা যাতায়াত ভাড়া না দিলে ফ্রিতে ও নেওয়া হয় না। কেননা এখন মাত্র ৫০০ টাকা দরেও ব্যাপারিরা চামড়া কিনতে চায় না।

ঈদের দুই দিন আগে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ছুড়ি দিত ধার করানোর জন্য। ছাত্ররা দিনভর চিঠি বিতরন করতো এবং রাত জেগে ছুড়ি ধার দিত। যারা পশু যবাইয়ে অভ্যস্ত না তারা কষাইয়ের দোকানে গিয়ে শিখে আসতো। আমি যেদিন প্রথম যবাহ শিখতে যাই সেদিন কমপক্ষে ৫০০ ছাত্র সিরিয়াল ছিল যবাই শেখার জন্য।

এখানে একটু কৌশল অবলম্বন করলে সহজেই যবাহ দেওয়া শেখা যায়। কষাইদের হাতে কিছু টাকা বা পান ধরিয়ে দিলেই আপনাকে সে আগে যবাহ করতে দিবে। ঈদের দিন ফজরের পর পরই খানা খেয়ে গোসল করে নিতাম। কারন ঈদের নামাজ যার যার এলাকায় গিয়ে পড়তে হতো। ঈদের নামাজ পড়েই ছুড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতাম যবাহ ও চামড়া কালেকশনের জন্য।

সারাদিন চামড়া কালেকশন করে নির্দিষ্ট স্থানে তা পৌঁছে দিয়ে সোজা মাদ্রাসায় চলে আসতাম। মাদ্রাসায় এসে খানা খেয়ে আছরের নামাজের পর রওনা করতাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর যাদের বাড়ি দূরে তারা যেতে যেতে একদিন পার হয়ে যেত। এভাবেই কাটছে গত ১৫ থেকে ১৬ বছর।

মাদ্রাসা লাইফে কুরবানির এ উপলক্ষটি ছিল আনন্দের। এর মধ্যেই আমি শান্তি খুঁজে পেতাম। হারানো দিন বারবার ফিরে আসুক , প্রতিদিন এমন একটি চাওয়া জাগরত হয় আমার হৃদয় আঙ্গিনায়।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment