আমরা মাঝেমধ্যে নানা রকম স্বপ্ন দেখি—কিছু সুখের, কিছু দুঃখের, কিছু আবার ভয়ের। তবে সব স্বপ্নই আমাদের মনে গেঁথে থাকে না, আর অনেক সময় আমরা সেগুলোর গুরুত্বও দিই না। কিন্তু অসংখ্য স্বপ্নের ভিড়ে কিছু স্বপ্ন এমন থাকে, যা হৃদয়ে ঝড় তোলে, মনে জাগায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি। ঘুম ভেঙে যায় ঠিকই, কিন্তু থেকে যায় এক মিষ্টি অনুভব, এক রেশ—যা মনকে নাড়া দেয়, প্রাণকে জাগিয়ে তোলে। তখন মনে হয়—আহা! যদি এই স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ নিত!
তেমনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি সেদিন। কী যে অপার আনন্দে মন ভরে গিয়েছিল, আর ঘুম ভাঙার মুহূর্তটাও হয়ে উঠেছিল অবর্ণনীয় সুন্দর! দুপুর প্রায় ১২টা—জালাইলাইনের ঘন্টা শেষ করে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে গেল।
স্বপ্নে দেখি—আমি বসে আছি বিশ্বের অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন আলিমে দ্বীন, উম্মতের রাহবার, শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানী সাহেব দা.বা.-এর সান্নিধ্যে, দারুল উলুম করাচির অফিসকক্ষে। হযরত একান্তভাবে কথা বলছেন, মন খুলে বলছেন নানা বিষয়ে। এরপর শুরু হয় কিতাব তাকসীম—হযরত নিজ হাতে আমাকে একাধিক কিতাবের ভার তুলে দিচ্ছেন সেখানে পড়ানোর জন্য। কী সৌভাগ্য হত সত্যি হলে! ভাবা যায় !
স্বপ্নের মাঝে আমি বলি, ‘হুজুর, আমার তো ঢাকায় একটি মাদরাসায়ও খেদমত আছে। সেখানে কয়েকটা ক্লাস নিতে হয়। আপনি যদি কেবল একটা কিতাবের জিম্মাদারি দেন তাহলে আমি নিয়মিত আসতে পারব, ছাত্রদের সঙ্গেও মুজাকারা করতে পারব।’
আমার কথা শুনে হযরত স্নেহভরে তাকালেন, কিছু একটা বললেন— ঠিক তখনই ঘুম ভেঙে গেল।
ঘুম ভাঙ্গার পর মনে হলো, যেন হৃদয়টা অন্যরকম এক প্রশান্তিতে ভরে গেছে। যার দিদার পাওয়ার জন্য মন এতদিন ধরে ব্যাকুল, যার দারসে বসার স্বপ্ন বহুদিন ধরে লালন করে চলেছি, যাকে একটুখানি কাছ থেকে দেখার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তের লক্ষ লক্ষ তালিবে ইলম তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে—তাঁকে নিয়ে আল্লাহ আমাকে এমন অপূর্ব একটি স্বপ্ন দেখালেন!
এই স্বপ্নটা বহু সময় ধরে আমার মনে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। ভাবলাম, এমন স্বপ্ন শুধু দেখে রেখে দিলেই হয় না—লিখে রাখি ডায়েরিতে। কোনো একদিন আবার পড়েও যেন হৃদয় ভরে উঠতে পারে পুরোনো স্মৃতির আলোয়।
আল্লাহর দরবারে দোয়া করি—উম্মাহর এই রাহবারকে দীর্ঘ হায়াতে তাইয়েবা দান করুন এবং আমাদেরকে সরাসরি তাঁর সোহবত লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।”
মাহফুজ ইবনে আব্দুল হাকিম
শিক্ষকঃ জামিয়া উসমান বিন আফফান রাঃ নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত, ঢাকা।