রাতটা ছিল নিঃসঙ্গ। আকাশ ছিল নক্ষত্রে ভরা। আমি চট্টগ্রামের এক পাহাড়ি গ্রামে সফরে আছি । এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতি দেখা নয়, বরং একটু একা থাকা—নিজেকে বোঝা, নিজের ভেতরের গহিন আলোর সন্ধানে বের হওয়া।
শহরের ব্যস্ততা, সোশ্যাল মিডিয়ার কৃত্রিম হাসি, মানুষের অবিরাম মুখোশের ভিড়—সবকিছুর মাঝখানে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমার “আমি”কে। তাই নির্জন এই সফর। রাতে পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় স্নান করা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে যখন চোখ বন্ধ করলাম, একটা প্রশ্ন হৃদয়ে ঘূর্ণির মতো জেগে উঠল— “আমি কে? কেন এসেছি এই দুনিয়ায়? আমার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কোথায়?”
পরদিন সকালে গ্রামের এক বৃদ্ধ হাফেজ চাচার সঙ্গে দেখা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও চোখে ছিল এক গভীর প্রশান্তি। আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতেই তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কথাটি বললেন— “বাবা, দুনিয়ার পথে পথিক হয় সবাই, কিন্তু ক’জন জানে নিজের মূল গন্তব্য কোথায়?
আমার শান্তির উৎস একটাই—আমি জানি, আমি আমার রবের দিকে ফিরবো।” সেই শুরু। তিনি আমাকে কুরআনের আয়াত শোনালেন, নবীজি ﷺ-র কিছু হাদীস বুঝিয়ে বললেন।
পাহাড়ের পাখির ডাকের মাঝে, গাছের পাতার মৃদু শব্দে, আর নামাজের তপ্ত সিজদায় আমি যেন আল্লাহর ডাক অনুভব করলাম। এক রাতে তিনি আমাকে এক আয়াত শুনালেন, যা আমার হৃদয় চিরদিনের জন্য বদলে দিল— “জেনে রাখো! আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দ, আয়াত ২৮)
আমি গ্রামের একটি মসজিদে এক জুমার খুতবা শুনলাম। খতিব বলছিলেন— “দুনিয়া একটা সফর, কিন্তু গন্তব্য হলো আখিরাত। সেই গন্তব্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় আজ থেকেই।” খুতবার প্রতিটি শব্দ যেন আমার ভেতরের অন্ধকারে আলো ছড়িয়ে দিল। সে সফর শুধু পাহাড় দেখা নয়, বরং নিজের আত্মাকে চিনে ফেলা ছিল।
এক অদৃশ্য শক্তি যেন আমাকে আমার রবের দিকে টেনে নিল। নামাজ এখন আর সময় নষ্ট মনে হয় না—এটা আমার আরাম, আমার আত্মার শান্তি।
শেষ কথা:
আজ আমি জানি, প্রকৃত ভ্রমণ মানে শুধুই জায়গা বদল নয়—বরং আত্মার ভেতর এক আলো জ্বালানো, নিজের সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে সেতুবন্ধ গড়ে তোলা। সেই আলোয় শেখ আবু ফাহিম নতুনভাবে বাঁচতে শিখেছে—আল্লাহর দিকে ফিরে এসে।