দুরন্ত ছেলে নাদিম। ক্লাস সেভেনে পড়ে। সবকিছুতেই তার ব্যাপক চাঞ্চল্য আর দুরন্তপনা। সারা বছর পড়ালেখার ধারে কাছেও নেই , অথচ প্রতিবারের মতো ক্লাসের ফার্স্ট বয় হয়ে নিজের মেধার পরিচয় দেয়। আর এ কারণেই ক্লাসের সকল দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে পেলে তার বন্ধু। তাদের নিয়ে অন্য লোকের গাছের ডাব, পেয়ারা, আম ইত্যাদি সকল কিছু নিপুন হস্তে আত্মসাৎ করে সে।
অথচ গ্রামের সকলের কাছে সে একজন সুবোধ ভদ্র বালক। কেউ তার এই কাণ্ডের কথা কল্পনাও করতে পারে না। খাওয়া-দাওয়াতেও সে ভালই সরস। কোন খাবারে তার অনীহা নেই। কিন্তু মিষ্টি সে দু চোখে দেখতে পারেনা।
পরিবারের লোকজন জোর করেও তাকে কোনদিন একটা মিষ্টি খাওয়াতে পারেনি। তার সামনে মিষ্টি আনা হলেই সে পালিয়ে বেড়ায়। এক বিকেলের কথা। গ্রামের মাঠে ঐতিহ্যবাহী মেলা বসেছে। মেলায় নাগরদোলা,পুতুল নাচ, যাদুর খেলা, মাটির থালা বাসন, মুড়ি মুরকি মিঠাই সন্দেশের দোকান সহ আরো কত কী আয়োজন!
নাদিম ও তার বন্ধুরা আগে থেকে ঠিক করেছে-আজ বিকেলে দলবলসহ মেলায় যাবে। যথাসময়ে সবাই জায়গা মতো উপস্থিত। সবাইকে নিয়ে নাদিম মেলার পথ ধরল। মেলায় গিয়ে প্রথমে সমস্ত মেলা একবার ঘুরে দেখে নিল কোথায় কি আছে। নাদিম অবাক হয়ে দেখল এক জায়গায় আগুন পান বিক্রি হচ্ছে। একটা লোক পানের মধ্যে কি সব মসলাপাতি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সেই প্রাণ লোকজনের গালে ভরে দিতেই আগুন নিভে যায়।
নাদিমেরও ইচ্ছা হল সেই পান খাবে। কিন্তু পকেটে আছে মাত্র ২০ টাকা। অথচ একটা পানের দাম ৫০ টাকা। কি আর করা! হতাশ হয়ে সে বন্ধুদের নিয়ে সামনে চলে গেল।
বন্ধুরা ঠিক করেছে আজ হরিদাস বাবুর মিঠাইয়ের দোকান থেকে বিখ্যাত লাড্ডু খাবে । কিন্তু নাদিম সেই লাড্ডু ছুয়েও দেখবে না। কারণ মিষ্টিতে তার জলাতঙ্ক আছে। কিন্তু বন্ধু বান্ধবের সামনে তো আর এই বাহানা দিয়েই পার পাওয়া যায় না। সকলে তাকে জোর করে হরিদাসের মিঠাইয়ের দোকানের সামনে নিয়ে এলো।
সবার থেকে ৫ টাকা করে উঠিয়ে মোট ৩০ টাকা দিয়ে এক পোয়া লাড্ডু কিনা হলো। তখন সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থায়। এই সময়েই সব বন্ধুরা লাড্ডু খাওয়া শুরু করল। তাদের দেখাদেখি নাদিমও একটি লাড্ডু হাতে নেয়। নিয়ে তাতে কামড় দেয়। “আহ্! কী অমৃত স্বাদ”!
লাড্ডুর মিষ্টি মোলায়েম স্বাদে তার চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে এলো। এত মজাদার খাবার সে কখনো খায়নি। নাহ্ এই খাবার মাত্র একটা খেলে হয় না। বন্ধুদের থেকে কেড়ে সে বাকি লাড্ডু গুলোও খেয়ে নিল। সন্ধ্যা বেলা সেই লাড্ডুর সাথে ভুত ছিল কিনা কে জানে। এরপর থেকে নাদিম লাড্ডুর নেশায় পড়ে যায়।
বাসায় কিছুদিন পরপরই বায়না ধরে লাড্ডু আনার জন্য। তার আকষ্মিক পরিবর্তন দেখে সকলেই খানিকটা চিন্তিত। একদিন তার পিতা রাতে বাড়ি ফেরার পথে তার কথা চিন্তা করে দুই কেজি লাড্ডু কিনে আনে। কিন্তু এটা তাকে না জানিয়ে গোপনে তা ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়। কারণ জানলে সে একাই সব সাবাড় করে ফেলবে। সময়মতো তাকে একটি দুটি করে দেওয়া হবে।
কিন্তু সেই রাতেই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। রাত তখন দুইটা কি আড়াইটা বাজে। নাদিম তখন গভীর ঘুমের আচ্ছন্ন। কিন্তু কে যেন নাদিমের কানে ফিসফিস করে বলছে। “নাদিম উঠ। উঠে ফ্রিজ খুলে লাড্ডু খা।”
অথচ বাসায় লাড্ডু আনা হয়েছে নাদিম সেটা জানে না। নাদিম বাধ্য ছেলের মত বিছানা ছেড়ে ঘুম ঘুম চোখে রুমের দরজা খুলে ফ্রিজের সামনে আসে। ফ্রিজ খুলতেই নাদিমের ঘুম উড়ে গেল।
আরে! ওই তো মিষ্টির বাক্স দেখা যাচ্ছে। গোপনে ফ্রিজ থেকে মিষ্টির বাক্স নিয়ে তার রুমের দিকে পা বাড়ায়। মা আওয়াজ পেলে নাদিমকে বকা শুনতে হবে। আস্তে আস্তে পা ফেলে সে তার বিছানায় এসে বসলো। তারপর মিষ্টির বাক্স খুলতেই নাদিমের চোখ ছানাবড়া। গোটা গোটা লাড্ডু তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে একটা লাড্ডু তে হাত দিতেই অমনি সেটা টুপ করে তার মুখে ঢুকে গেল।
যেন অদৃশ্য কেউ তার হাত থেকে ছো মেরে লাড্ডুটা মুখে ভরে দিয়েছে। এভাবে সে যতগুলো সম্ভব লাড্ডু খেয়ে বাকিটা ফ্রিজে রেখে আসে। তারপর পানি খেয়ে সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু পরের দিন একই রকমের আশ্চর্য ঘটনা তার সাথে ঘটে। ঘুমের মধ্যে কে যেন তার কানে কানে এসে ফিসফিস করে বলে, নাদিম উঠ – আমার লাড্ডু চাই । আমাকে লাড্ডু খেতে দে।