Home আন্তর্জাতিকপরিবারের প্রাণ বাঁচাতে গাজার রাস্তায় কিশোরী জানা’র সংগ্রাম

পরিবারের প্রাণ বাঁচাতে গাজার রাস্তায় কিশোরী জানা’র সংগ্রাম

by MD JUNAYED SHEIKH

সংগৃহীত ছবি

উজ্জ্বল গোলাপি রঙের সিন্ডারেলার ছবিযুক্ত সোয়েটার পড়া কিশোরীর নাম জানা মোহাম্মদ। ১২ বছর বয়সী এই কিশোরী হাঁটছে উত্তর গাজার ধ্বংসস্তুপ আর ধুলোয় মোড়া রাস্তা দিয়ে। বড় একটি পাত্র হাতে ধরে রাখা জানার লক্ষ্য, খাবার ও পানি সংগ্রহ।

গাজার রাস্তায় পুরুষদের চলা নিরাপদ নয়।

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি, আটকসহ পদে পদে তাদের জন্য অপেক্ষা করে নানা বিপদ। তাই পরিবার বাঁচানোর সংগ্রামে অনেক সময় রাস্তায় নামতে হয় মেয়েদের। 

জানার পরিবারও হারিয়েছে তাদের একমাত্র ছেলেকে। জানা বলে, এক বছর আগে ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে তার বড় ভাই নিহত হওয়ার পর থেকেই পরিবারে খাবার আর পানি আনার দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর।

জানার বাবা-মা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের দেখভালের দায়িত্বও এখন তার।

জানা দুই হাতে দুই ভারী বালতি ভর্তি পানি নিয়ে যখন বাড়ির পথে যায় তখন তার সাথে পানি নিয়ে যেতে দেখা যায় আরও কয়েকজনকে। 

গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হলে খাবার ও পানির সংকট শুরু হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে যখন ইসরায়েল সব ধরণের সহায়তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, তখন অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রতি পাঁচজনের একজন এখন অনাহারের মুখে, এবং এই সংকট মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েল বলছে, অবরোধ ও সামরিক অভিযান হামাসকে জিম্মি মুক্তির জন্য চাপ দিতেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলছে, ইসরায়েল ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

জানা বলে, ‘একটা বালতি পূরণ করাই কষ্টকর, কেউ লাইন মানে না, অপেক্ষা করলে কিছুই পাওয়া যায় না। কখনো কখনো আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়।

স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ডক্টর’স উইথআউট বর্ডার্স জানিয়েছে, জানুয়ারি ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে তারা যে ১,৭০০টি পানি ও স্যানিটেশন পণ্য গাজায় পাঠাতে চেয়েছিল, তার দুই-তৃতীয়াংশই ইসরায়েল অনুমোদন দেয়নি।

জানা বলেছে, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি শুধু এক বালতি পানি পাওয়ার জন্য। এটা এক ভয়ানক অনুভূতি।’

বাসিন্দাদের অনেক সময় লবণাক্ত পানি দিয়েই পরিষ্কার ও রান্নার কাজ করতে হয়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা ‘মৌলিক কিছু খাবার’ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তবে সোমবার মাত্র ৫টি ট্রাক প্রবেশ করে, যেখানে জরুরি সহায়তা দিতে প্রতিদিন প্রয়োজন অন্তত ৫০০টি ট্রাক।

জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এই সহায়তাকে ‘সমুদ্রের মাঝে এক ফোঁটা পানি’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

এখন পর্যন্ত শুধু অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ৫৭টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment