পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সংঘাতের পর মঙ্গলবার আসিম মুনিরকে পদোন্নতি দিয়ে ‘ফিল্ড মার্শাল’ র্যাংক দেওয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে এটাই সর্বোচ্চ র্যাংক।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের নতুন র্যাংক নিয়ে কটাক্ষ করে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেশে যেহেতু জঙ্গলের শাসন চলছে, সেহেতু ফিল্ড মার্শাল নয় তাকে ‘রাজা’ পদবী দিলেই সেটা যথাযথ হতো।
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সংঘাতের পর মঙ্গলবার মুনিরকে পদোন্নতি দিয়ে ‘ফিল্ড মার্শাল’ র্যাংক দেওয়া হয়।
“মাশাল্লাহ, জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল বানানো হয়েছে। তবে সত্যি বলতে কী, এর বদলে তাকে ‘রাজা’ খেতাব দিলেই তা আরও উপযুক্ত হতো, কারণ এখন দেশ চলছে জঙ্গলের আইনে। আর জঙ্গলে, কেবল একজনই রাজা থাকে,” বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ইমরান এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ফিল্ড মার্শালই সর্বোচ্চ র্যাংক। এর আগে একমাত্র ফিল্ড মার্শাল ছিলেন দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান। ১৯৬৫ সালের পর আসিম মুনিরই প্রথমবার দুর্লভ এই সামরিক র্যাংক পেয়েছেন।
একাধিক মামলায় ২০২৩ সাল থেকে জেল খাটা ইমরান তার সঙ্গে সামরিক কর্তৃপক্ষের ‘চুক্তির’ গুঞ্জনও উড়িয়ে দিয়েছেন।
“কোনো চুক্তি হয়নি, কোনো আলোচনাও চলছে না। এগুলো সব ভিত্তিহীন মিথ্যা,” বলেছেন তিনি।
তবে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় আগ্রহী। সামরিক কর্তৃপক্ষ যদি পাকিস্তানের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই ভেবে থাকে, তাহলে তাদেরকে তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে খোলাখুলি আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি।
“দেশ বাইরের শক্তির হুমকির মুখোমুখি, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়ছে। আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি কখনোই নিজের জন্য কিছু চাইনি, এখনও চাইছি না,” বলেন তিনি।
ভারত আরেকটি হামলা চালাতে পারে বলে শেহবাজ শরিফ সরকারকে সতর্কও করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সরকারকে অবশ্যই যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান এখন এমন এক জায়গায় পরিণত হয়েছে যেখানে আইন কেবল দুর্বলের ওপর প্রয়োগ হয়, শক্তিশালীরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
“গণতন্ত্রের মূল চেতনা যে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার প্রতিফলন চলমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে। আপনি যখন এই বার্তা দেন, যে যত বড় চোর, তার পদও তত উঁচুতে, তখন আপনি ন্যায়বিচারকে কবর দেন। এনএবিতে (ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো) এখনও (প্রেসিডেন্ট) আসিফ জারদারির বোনের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তিনি কর্মচারীদের নামে ৫টি অ্যাপার্টমেন্ট নিবন্ধন করেছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি বিদেশে, কারও তাকে প্রশ্ন করার সাহস নেই। শেহবাজ শরিফ অভিযুক্ত ২২ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি মুদ্রাপাচারে অভিযুক্ত, এরপরও তাকেই বানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী,” বলেন ক্ষুব্ধ ইমরান।
গত তিন বছরে পাকিস্তানের নৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামোও ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
“তোশাখানা-২ মামলায় হাস্যকর একটি বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। কারাগারে যেমনটা হয়, আদালতের কার্যক্রমও একজন কর্নেলের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। আমার বোন ও আইনজীবীদের আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না; আমার সঙ্গীদের আমার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না; মাসের পর মাস আমাকে আমার সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না; আমার বই পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয় না, আমার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এভাবে বারবার আদালতের আদেশ এবং আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে,” বলেছেন তিনি।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের বরাত দিয়ে ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট লিখেছে, তেহরিক ই ইনসাফ দলের নেতা ইমরান বুধবার মামলার শুনানি চলাকালে জেলপ্রাঙ্গনেই তার বোন ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
কারাবন্দি ইমরান নিজে তার এক্স অ্যাকাউন্ট চালাতে পারেন না, তার বার্তা তার হয়ে এক প্রতিনিধি দেন। যদিও সেই প্রতিনিধির নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।